মক্কার শ্রেষ্ঠ সুফি ও মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী

মক্কার শ্রেষ্ঠ সুফি ও মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী

মক্কার শ্রেষ্ঠ সুফি ও মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী
মক্কার শ্রেষ্ঠ সুফি ও মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী

মিজানুর রহমান (টনি): তাজুন নিসা বিনতে রুস্তম বিন আবির রজা (রহ.) ছিলেন মক্কার প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, আধ্যাত্মিক সাধক ও নারী ওয়ায়েজ (উপদেশদাতা)। মক্কায় তিনি হাদিসের পাঠদান করতেন এবং মানুষকে আল্লাহপ্রেমের সবক শেখাতেন।

ধারণা করা হয়, তাজুন নিসা (রহ.) ৫১৬ হিজরিতে তৎকালীন পারস্যের সমরখন্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই তাঁর শৈশব অতিবাহিত হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর পরিবার বাগদাদে হিজরত করে এবং তিনিও পরিবারের সঙ্গে বাগদাদে কিছুদিন অবস্থান করেন।

সর্বশেষ মক্কায় এসে স্থিত হন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর উপনাম উম্মে আইমান এবং তাঁর পূর্বপুরুষরা ইরানের ইস্পাহানে বসবাস করতেন বলে তাঁকে উম্মে আইমান ইস্পাহানিও বলা হয়।বাগদাদের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস, শাফেয়ি মাজহাবের অন্যতম ফকিহ আবু সুজা জাহের বিন রুস্তম (রহ.) ছিলেন তাঁর ভাই। যিনি হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রের মতো ইলমে তাসাউফের উঁচু স্তরের ইমাম ছিলেন।

নিজ যুগের পীর ও মাশায়েখরা যাঁকে ‘ইমামুল মাকাম’ (উচ্চস্তরের অধিষ্ঠিতদের নেতা) উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। (সিয়ারু আ’মুন নুবালা : ২২/১৮)মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য হিসেবে পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তাজুন নিসা (রহ.)-এর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সমরখন্দ, বাগদাদ ও মক্কার প্রসিদ্ধ আলেমদের কাছ থেকে উচ্চতর দ্বিনি ইলম অর্জন করেন। ইরাকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আবুল ওয়াক্ত (রহ.)-এর কাছে তিনি সহিহ বুখারির পাঠ গ্রহণ করেন।

এ ছাড়া তিনি খ্যাতিমান মুহাদ্দিস আবু তালিব বিন খুজাইর, আবু মানসুর আল-কাজ্জাজ ও আবুল কাসিম সমরখন্দি (রহ.)-এর কাছ থেকে হাদিসের পাঠ গ্রহণ করেন। (মাউসুয়াতু রুয়াতুল হাদিস)ইলমে দ্বিন অর্জনের পাশাপাশি তিনি আত্মিক পরিশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক দীক্ষার প্রতিও মনোযোগী ছিলেন। ধারণা করা হয়, বাগদাদে অবস্থানের তরিকতের বড় বড় শায়খের মনোযোগ ও দোয়া লাভে সক্ষম হন এবং তাঁদের নির্দেশনায় নিজেকে আধ্যাত্মিকতার উচ্চ মার্গে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ফলে তিনি আলোর উজ্জ্বল মিনারে পরিণত হন। পবিত্র মক্কায় অবস্থানের সময় তিনি মানুষকে ওয়াজ বা ধর্মোপদেশ প্রদান করতেন।

তাঁকে মক্কার শ্রেষ্ঠ সুফি-সাধক মনে করা হতো। ইমাম তকিউদ্দিন ফাসি মক্কি (রহ.) তাঁর সম্পর্কে বলেন, তিনি মক্কার সুফিদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। (আল-ইকদুস সামিন : ৮/১৯২)

তবে ভাইয়ের মতো তিনিও অন্য সুফিদের তুলনায় ব্যতিক্রম ছিলেন। কেননা সাধারণত সুফি-সাধকরা নির্ধারিত সময়ের পর কোরআন-হাদিসসহ শরিয়তের জ্ঞানচর্চা থেকে সরে যায়। কিন্তু তাজুন নিসা (রহ.) মৃত্যু পর্যন্ত কোরআন-হাদিস ও ইলমে তাসাউফের সমান্তরাল চর্চা অব্যাহত রাখেন।

আল্লামা সালাউদ্দিন সাফাদি (রহ.) বলেন, ‘তিনি ছিলেন পবিত্র হেরেমের শায়খাহ (হাদিসের শিক্ষিকা)। তিনি বিরল প্রতিভার অধিকারী ও আল্লাহসাধক ইবাদতকারী ছিলেন। তিনি দীর্ঘ জীবন লাভ করেন এবং আল্লাহর ভালোবাসায় কুমারিত্বকে বেছে নেন।’ (আল ওয়াফি বিল-ওয়াফায়াত : ১০/৩৬৫)

বরেণ্য এই নারী মনীষী পবিত্র ৬১১ হিজরিতে পবিত্র মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। বাগদাদের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও হাদিসবিশারদ মুহিবুদ্দিন ইবনুন নাজ্জার (রহ.) ও ফকিহ হাফেজ ওমর বিন আবদুল মজিদ আল আজদি (রহ.) তাঁর ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। (মাউসুয়াতু রুয়াতুল হাদিস)

মহান আল্লাহ তাঁর কবরকে শীতল করুন। আমীন আমিন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply